মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:১১ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে রংপুরের মামলা হাইকোর্টে স্থগিত স্বর্ণের দাম ভরিতে কমল ৪২০ টাকা গরমে ফ্রিজের ঠাণ্ডা পানি খাওয়া কি ঠিক? প্রয়োজনে শুক্রবারও ক্লাস-পরীক্ষার সিদ্ধান্ত আসতে পারে: শিক্ষামন্ত্রী সারাদেশ উপজেলা নির্বাচনে সেনাবাহিনী নামানো সম্ভব নয়: ইসি আলমগীর সমুদ্রসীমায় ২০ মে থেকে ৬৫ দিন‌ সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ হচ্ছে পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে বাংলাদেশ অঙ্গীকারাবদ্ধ : আইএইএ প্রধানকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হবিগঞ্জে হারুন হত্যা মামলা : ৭ জনের মৃত্যুদণ্ড, ১০ জনের যাবজ্জীবন চুক্তি হোক বা না হোক, রাফায় অভিযান চলবে : নেতানিয়াহু চলতি সপ্তাহেই গ্রেফতার হতে পারে নেতানিয়াহু
জাহাঙ্গীরের সাম্রাজ্যে শুদ্ধি অভিযান

জাহাঙ্গীরের সাম্রাজ্যে শুদ্ধি অভিযান

স্বদেশ ডেস্ক:

‘ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ’। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গাজীপুর মহানগর সাধারণ সম্পাদক এবং সাবেক সিটি মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে গত ১৯ নভেম্বর আজীবন বহিষ্কারের মাধ্যমে তা আরও একবার প্রমাণ করেছে। বহিষ্কারের পরও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে যারা জাহাঙ্গীরের গুণকীর্তন করে সঙ্গে ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগ। অপরদিকে সিটি করপোরেশন এলাকায় হাট-ঘাট বা পরিবহন ব্যবসা থেকে জাহাঙ্গীর অনুসারীদের বিতাড়িত করা হয়েছে।

গত রবিবার মহানগরের বঙ্গতাজ অডিটোরিয়ামে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিশেষ সভায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক প্রধান অতিথি ছিলেন। তা ছাড়া সভায় যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল, আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি এমপি, সামসুন্নাহার ভূঁইয়া এমপি, মহানগর সহসভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সিটি মেয়র মো. আসাদুর রহমান কিরন, মহানগর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মন্ডল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভায় উপস্থিত গাজীপুর মহানগরে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক

মতিউর রহমান মতি জানান, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ওসমান আলীকে প্রধান করে ১১ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পরবর্তী সাত দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর চলতি মাসে ২১ তারিখ পরবর্তী সভায় ওইসব নেতাকর্মীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তা ছাড়া সভায় শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও মহান বিজয় দিবস উদযাপনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

জানা গেছে, ওই সভায় মহানগর আওয়ামী লীগের ৯৩ সদস্যের মধ্যে বেশ কয়েকজন নেতাই অনুপস্থিত ছিলেন। তাদের বেশিরভাগই জাহাঙ্গীরের অনুসারী বলে পরিচিত।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক মহানগর নেতা বলেন, সুতা বাছতে গেলে কম্বল থাকবে না। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রউফ নয়নকে যেভাবে সিটির অনুষ্ঠানে তরুণদের উসকে দিয়ে অপদস্ত করা হয়েছে। তিনি সেখান থেকে কেঁদে বের হয়েছেন। মান-সম্মানের কথা ভেবে তারা সভায় অনুপস্থিত ছিলেন। দল থেকে বহিষ্কার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জাহাঙ্গীর আওয়ামী লীগের কেউ না। সে আমাদেরও কেউ না। তবে আমরা আওয়ামী লীগের আদর্শের বাইরে এক মুহূর্তও ভাবি না।

এদিকে নেতাদের দাওয়াত করার পরও সভায় অনুপস্থিত থাকা রহস্যজনক মনে করেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ১১ সদস্যের তদন্ত কমিটির সদস্য কাজী ইলিয়াস আহমেদ। তার ভাষ্য, ব্যক্তিগত সমস্যার কারণেও অনেকে অনুপস্থিত থাকতে পারেন। তবে সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে বহিষ্কারের পরও যারা তার সঙ্গে রাজনৈতিক যোগাযোগ রেখেছেন তাদের বিষয়ে কমিটির তদন্তের মাধ্যমে পরবর্তী পূর্ণাঙ্গ সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মহানগর কমিটির এক নেতা বলেন, ভারপ্রাপ্ত মেয়রের ক্ষমতা গ্রহণ অনুষ্ঠানে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রউফ নয়ন অপদস্ত হয়েছেন। সেই ভয়ে সাবেক সাধারণ সম্পাদকের ঘনিষ্ঠ এবং মেয়রের কাছ থেকে বিভিন্ন সুবিধাভোগ করা ওইসব নেতা ৫ তারিখের সভায় অনুপস্থিত ছিলেন। তা ছাড়া অনুপস্থিত থাকার মাধ্যমে কোরাম সংকট সৃষ্টি করাও উদ্দেশ্য হতে পারে। জাহাঙ্গীর আলমকে ১৯ নভেম্বর বহিষ্কারের পর তার বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে অনেক নেতা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। একইভাবে ৫ তারিখের সভায় অনুপস্থিতির মাধ্যমে নিজেদের জাহাঙ্গীরের অনুসারী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। যা তাদের রাজনৈতিক ক্ষতির কারণ হতে পারে।

মহানগরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের বহিষ্কারের পর অনুষ্ঠিত প্রথম সভার বিষয়ে মহানগরের ১৭, ৫৪, ৪১সহ কয়েকটি ওয়ার্ডের তৃণমূল নেতাদের মতামত জানতে চাওয়া হয়। তাদের ভাষ্য, বিজয়ের ৫০ বছর পূর্তির শুভক্ষণে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ থকে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তিকারী ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান ভবিষ্যতে অন্যদের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। জাহাঙ্গীর আলম নিজের পছন্দের লোকদের নিয়ে চলতেন। এই প্রথম সর্বস্তরের নেতাদের উপস্থিতিতে মহানগরে আওয়ামী লীগের ওই সভা এক মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে।

এদিকে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম প্রতি জোনে একজন আওয়ামী লীগ নেতাকে ট্যাক্স রিভিউ বোর্ডের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। এ ছাড়া জাহাঙ্গীরের অনুসারী যেসব নেতা সিটি করপোরেশনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন, তাদের কমিটি থেকে বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে।

মহানগরের হাট-ঘাট এবং কারখানার ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ থেকেও সাবেক মেয়র অনুসারীদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, টঙ্গী বাজারে খাস কালেকশনে জাহাঙ্গীরের অনুসারী মনি সরকারের নেতৃত্বে ১২ নেতা মাসিক এক লাখ টাকা সুবিধা নিয়েছেন। তাদের সেখান থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে মনি সরকারের বক্তব্য নেওয়ার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

একইভাবে সালনা বাজার, সালনা এলাকার এমবিএম এবং ডটকম গার্মেন্টসের ঝুট ব্যবসা, চৌরাস্তা, টঙ্গী, কোনাবাড়িসহ মহানগরে জাহাঙ্গীর অনুসারীদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।

গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ মন্ডল আমাদের সময়কে বলেন, ৫ তারিখের সভায় উল্লেখযোগ্য নেতার অনুপস্থিতির বিষয়ে কমিটি তদন্ত করছে। একইভাবে সাবেক সাধারণ সম্পাদকের বহিষ্কারের পর তার সঙ্গে রাজনৈতিক যোগাযোগ রক্ষাকারীদের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। কমিটির প্রতিবেদনের পর তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877